
প্রকাশিত: Sun, Jan 29, 2023 3:57 PM
আপডেট: Thu, Jun 5, 2025 6:46 AM
বাংলাদেশে বিবর্তনবাদ না পড়ানোটাই স্বাভাবিক!
শিশির ভট্টাচার্য্য: বাংলাদেশের স্কুলে বিবর্তনবাদ না পড়ানো নিয়ে যারা হা-হুতাশ করছেন, তাদের বলি, ব্যক্তি কিংবা জাতিকে জীবন তাই দেয়, যা সে পাবার যোগ্য। সে তাই পায়, যা সে কায়মনোবাক্যে চায়। তাই সে চায়, যা চাইবার ক্ষমতা তাঁর আছে। যা চাইবার মতো সামাজিক-মানসিক পর্যায়ে সে নেই, এমন কিছু চাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। মধ্যযুগের আরব এবং আজকের আরব এক জিনিস চায় না। ফরাসি জাতি এবং বাঙালি জাতির চাওয়া এক নয়, এক হতেই পারে না। উচ্চমানের আকাক্সক্ষার জন্য ব্যক্তি ও জাতিকেও একটা বিশেষ উচ্চতায় পৌঁছতে হয়।
বাংলাদেশে স্কুলে বিবর্তনবাদ পড়াতে দেওয়া হবে না এটাই স্বাভাবিক। বিবর্তন বাদ পড়ানোর প্রস্তাবে হৈচৈ হবে না এটা অস্বাভাবিক। ‘কাকের বাসায় কোকিলের ছা। জাতস্বভাবে করে রা’ ‘অঘারাম বাস করে অজ পাড়াগাঁয়। রেডিও নয় অনাছিষ্টি কে তারে বোঝায়’ আপনি বিজ্ঞান পড়াতে চাইলেই অঘা খুশিতে বিজ্ঞান পড়বে? পাগল না পেট খারাপ? আপাতত, পদার্থের গঠন যে পড়াতে দিচ্ছে, পড়তে রাজি হচ্ছে স্কুলে এবং মাদ্রাসায়, তাঁর জন্যে স্ব এবং শ্বজাতিকে ধন্যবাদ দিন। স্থান-কাল-পাত্রের উপর নির্ভর করে স্থির হয় ব্যক্তি ও জাতির চাওয়া-পাওয়া।
আজ থেকে শ’তিনেক বছর আগে যখন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়নি, তখন দেশ বা দেশপ্রেম বলে কিছু ছিল না, কিন্তু তাই বলে কি প্রগতি থেমে ছিল? মধ্যযুগের মানুষের মনে ঈশ্বর নেই এমন ভাবনা আসতেই পারতো না। তাই বলে কি জ্ঞানচর্চা থেমে ছিল? যে ডারউইন আশৈশব সৃষ্টিবাদে বিশ্বাস করে এসেছেন, তথ্য ও প্রমাণ তাঁকে বাধ্য করেছিল বিবর্তনবাদের প্রস্তাব করতে। ভারতবর্ষের মানচিত্রের দিকে তাকালে কি মনে হয় না একটি সিংহ কিংবা ব্যাঘ্রের ছবি? বাংলা অঞ্চলটাকে মনে হয় এই পশুর পিছনের দুই পায়ের সামনে শরীরের বর্জ্য নিষ্কাষণের জায়গা। এখানে আপনি কী আশা করেন? আপনাদের চোদ্য পুরুষের ভাগ্য যে শেখ মুজিব নামে একজন জন্মেছিলেন এই পোড়া দেশে এবং তিনি আপনাদের একটি জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন নিজের জীবন-যৌবনের বিনিময়ে।
বাঙালি যে কুর্দিদের মতো কয়েক জাতিরাষ্ট্রের লাথি-ঝাঁটা খাচ্ছে না, তাঁর জন্য ধন্যবাদটা প্রধানত বঙ্গবন্ধুর প্রাপ্য। এখনও যে বাঙালি বিদেশে গিয়ে কুকুরের মতো খাটছে, মরছে, তাঁর জন্য দায়ি বাঙালি রাজনীতিবিদ, আমলা, বিচারক, সেনানায়কসহ যাবতীয় ক্ষমতাবানেরা। তা না হলে, আর্য- মোঘল কে কবে এই অঞ্চলকে পাত্তা দিয়েছে? পাকিস্তানি পাঞ্জাবিদের নাকি পরিকল্পনা ছিল, সব বাঙালি মেয়েকে ধর্ষণ করে পুরো জাতটাকেই তারা পালটে দেবে। এমন কথা কোনো পাকিস্তানি জেনারেলের স্মৃতিকথায় পড়িনি কি? পাহাড়ি অঞ্চলে এমন পরিকল্পনা বাঙালিদের মনে থাকাও অস্বাভাবিক নয়। যখন থেকে কিছুটা সভ্যতা এসেছে এই বাংলা অঞ্চলে, একজন লোকও কি এখানে জন্মেছে যে কিনা মধ্যযুগের আরব কিংবা রেনেসাঁ পরবর্তি পাশ্চাত্যের দার্শনিক বিজ্ঞানীদের সমতূল্য? বেশি নয়, এক জন দেখানতো। টেনেটুনে খুব বেশি হলে অতীশ দীপঙ্কর, লালন কিংবা রবীন্দ্রনাথের নাম বলবেন। এদের কারোরই নিজস্ব দর্শন নেই।
ওরা যা বলেছেন, আগেও বলা হয়েছে যথাক্রমে বৌদ্ধ শাস্ত্রে, তন্ত্র ও সুফী শাস্ত্রে এবং উপনিষদে। ‘ঘরে আছে হুলো বিড়াল কোমড় বেঁধেছে’ অতীশ, লালন, রবীন্দ্রভক্তরা আবার হুলো বিড়ালের মতো কোমড় বেঁধে লাগতে আসবেন না। এই নামগুলো মাথায় আসলো বলেই বললাম। এটা আমার মূল বক্তব্য নয়। চাঁদ দেখাচ্ছি, সেদিকে তাকান, আঙ্গুলের সমালোচনা করতে শুরু করলে চাঁদকে চোখে হারাবেন। বাংলা অঞ্চলে কখনই লেখাপড়ার কদর ছিল না। রুশদি লিখেছেন, পূর্ববঙ্গের মাটিতে পাট হয়, পেটে বাচ্চা। যারাই বাঙালি জাতি এবং বাংলা অঞ্চলকে চেনেন, তারাই স্বীকার করবেন, এর চেয়ে সত্য কথা আর হতেই পারে না। লেখাপড়া জিনিষটাইতো অস্বাভাবিক বাঙালিদের কাছে। জীবন যাপনের কাজে লাগে লেখাপড়া, কিন্তু জীবন ধারণের জন্যতো লেখাপড়া অপরিহার্য নয়। বাংলাদেশের মানুষতো এখনও জীবন ধারনের পর্যায়ে আছে। জীবনকে ‘যাপন’ করতে তার আরও বহু শতাব্দী লেগে যাবে। আপনি কী করে আশা করতে পারেন যে দুই এক প্রজন্মেই বিজ্ঞানের ঝড় খেলবে এখানে? অনেকে লিখছেন, বিবর্তনবাদ না পড়ানোর কারণে জাতি নাকি পিছিয়ে গেল।
এই জাতি এগিয়ে ছিল কবে? স্কুলে বিবর্তনবাদ পড়ানো হয় না, হবে না, ঠিক আছে। যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করতে শেখানো হয় কি, হবে কি? চিন্তা করতে শেখানোটাইতো আসল। চিন্তা করতে আদৌ গণহারে শেখানো যায় কিনা, সেটাও প্রশ্ন। বাংলাদেশের বিজ্ঞান-স্নাতকেরাও যুক্তিসঙ্গতভাবে চিন্তা করতে জানে না। ‘বিজ্ঞান’ কাকে বলে তাই জানে না বেশির ভাগ তথাকথিত ইঞ্জিনিয়র। এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। সারা জীবন বিজ্ঞান পড়ে বাংলাদেশের বেশির ভাগ পাশ করা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়র বিশ্বাসকেই সত্য বলে মনে করে। বিবর্তন কিংবা সৃষ্টি, স্কুলে পড়ালেই সব শিখে ফেলবে এটা কষ্টকল্পনা। ধর্মতো সত্য কথা বলতে পাখিপড়া পড়ায়। তথাকথিত ধার্মিকেরা কেউ বলে সত্য কথা? আমিতো সত্যবাদী মানুষ দেখিনি আমার জীবনে। চারপাশের সবাইকে মিথ্যা কথাই বলতে শুনেছি। মানুষ কি আদৌ ধর্মে বিশ্বাস করে? বিশ্বাসই যদি করবে, তবে বেশির ভাগ মানুষ হাজার এক দুই নম্বরী করে কী করে? বাঙালিদের ‘ডুডুও চলে তামাকও চলে’।
নিয়মিত লোকদেখানো ধর্ম পালন করে, আবার প্রেমসে ঘুসও খায় বাংলাদেশে এমন লোকেরাই কি সংখ্যাগুরু নয়? ঠাকুর রামকৃষ্ণ নাকি বলতেন, ফল যখন পাকবে, আপনিই ছিঁড়ে মাটিতে পড়বে। লাথি দিয়ে, গরম লোহা ঢুকিয়ে, তুঁতে দিয়ে আপনি অসময়ে কাঁঠাল পাকানোর চেষ্টা করতেই পারেন, পাকবেও বটে, কিন্তু খেতে বিস্বাদ লাগবে এটুকু নিশ্চিত। চিন্তা যে করতে জানে, সে আগে পরে আপনিই জানবে, সৃষ্টি আর বিবর্তনের মধ্যে কোন বাদটা তাঁর বাদ দেয়া উচিত, ডারউইনের মতো। পূর্ণগর্ভা হয়ে সন্তান জন্ম না দিয়ে পেরেছে এমন কাউকে কি দেখা গেছে কখনও? বাঁজা বাঙালির পক্ষে আরও বহু কাল গর্ভধারণ সম্ভব হবেনা এই বেলা গাইনি ডাকা গেলো না বলে রৃথাই আপনারা সবাই হাহুতাশ করছেন দেশেবিদেশে। মাঝখান থেকে তথাকথিত বিজ্ঞানের কিতাব কটি লিখতে গিয়ে জাফর ইকবাল গং-এর খামাখা সময়টা নষ্ট হলো। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
